দিল্লিতে হাজারো পুলিশের নজিরবিহীন বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দিল্লির একটি আদালতে আইনজীবিদের কয়েকজন সদস্যের নিগৃহীত হওয়া ও গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন রাজ্যটির পুলিশ। গত শনিবারের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আইনজীবিদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশের এমন বিক্ষোভকে নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

তবে আইনজীবিরা বলছেন, কয়েকজন পুলিশ কর্মী এক নিরস্ত্র আইনজীবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, এমনকি তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে ব্যাপক মারধরও করা হয়। ওই ঘটনার পর দিল্লির অন্যান্য আদালতে কর্মবিরতি শুরু করেন আইনজীবিরা।

গত শনিবার দিল্লির তিস হাজারি আদালতে এক আইনজীবীর গাড়িতে পুলিশের গাড়ির ধাক্কা লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও একদল আইনজীবী। উত্তেজিত আইনজীবিরা পুলিশের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বলে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আইনজীবিরা পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিগৃহীত করে বলেও অভিযোগ ওঠে। এসময় বিক্ষুব্ধরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। আর ভাঙচুরের শিকার হয় অন্তত ২০টি গাড়ি। আহত হয় উভয় পক্ষের অন্তত ২৮ জন।

শনিবারের ওই ঘটনায় আইনজীবীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে নামে দিল্লি পুলিশ। রাজ্যের পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে নজিরবিহীন এই বিক্ষোভে তারা অভিযুক্ত আইনজীবিদের বিচারের দাবি জানান।

ফেডারেল শাসন ব্যবস্থা ভিত্তিক ভারতের রাজধানীও দিল্লি রাজ্যে। এর আগে এখানকার পুলিশের এত বড় বিক্ষোভের খবর শোনা যায়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজালকে পুলিশের এই উত্তেজনা থামানোর দায়িত্ব দিয়েছে। অনিল দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ নয়াদিল্লির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে জমায়েত হন। তারা ‘রক্ষকদের রক্ষা করুন’, ’আমরা কিল-ঘুষির বস্তা নই’, ‘পুলিশ কমিশনার সামনে আসুন’, ‘আমরা ন্যায় বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

তাদের অভিযোগ, পুলিশের ওপর আক্রমণ স্বত্ত্বেও আইনজীবিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। বাহিনীর সদস্যদের পাশে থাকার পরিবর্তে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছেন। ভারতীয় ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) অনেকেই বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন।

বিক্ষোভ চলাকালীন দিল্লি পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক আন্দোলনকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন, ‘আশা করি আপনারা শান্তি বজায় রাখবেন। গত কয়েকদিন যাবত দিল্লি পুলিশের একটি পরীক্ষা চলছে। অতীতেও এই ধরনের পরিস্থিতি আপনারা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিও অনেকটা সেইরকম। এতদিন আপনারা আইন রক্ষায় কাজ করেছেন। আশা করি এবার তা বজায় রাখবেন।’

তবে আন্দোলনকারীরা পুলিশ কমিশনারের আহ্বানে সাড়া দেননি। এখনও বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বিক্ষোভরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আমাদের দাবি না শোনেন, তাহলে অধস্তন কর্মকর্তারা অসহায়। আমার নাম আপনাকে বলতে পারবো না। আমি নাইট ডিউটি শেষ করেই পোশাক পাল্টে এখানে এসেছি…আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.