নওগাঁয় দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান

সাইদুজ্জামান সাগর ::

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুইদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন ফাতেমা বেগম (৩৩)।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্বামীর বাড়িতে গেলে স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায় এরপর থেকে ২ সন্তানকে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন ফাতেমা বেগম।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার তুরুক বাড়িয়া গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর ছেলে আবুল কাশেমের সঙ্গে নওগাঁ সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের সোলায়মান সরদারের মেয়ে ফাতেমা বেগমের প্রায় ১২ বছর আগে ১ লক্ষ টাকা যৌতুক ধার্য্য করে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এর মাঝেই দুই সন্তানের মা হন ফাতেমা বেগম। তারপর সংসার এবং দুই সন্তান মরিয়ম আক্তার ও মো. হোসাইন এর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কর্মের তাগিতে প্রায় ১০বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান আবুল কাশেম। বিদেশে থাকাকালীন সময়ে সাংসারিক খরচ নিয়মিত দিতেন কিন্তু গত ৫ বছর থেকে কোন খরচ দেয় না এবং এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

টাঙ্গাইলের মাদক সম্রাট মনির মেম্বার দুই বছর ধরে বিদেশ তবুও ইউপি সদস্য !

যার কারনে সন্তানদের নিয়ে ফাতেমা বেগম বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিন পূর্বে বিদেশ থেকে আবুল কাশেম বাড়িতে ফিরলে সন্তানদের সাথে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেলে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায় স্বামী আবুল কাশেম। এরপর থেকে স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে ২ সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান শুরু করেন ফাতেমা বেগম।

স্থানীয় প্রতিবেশি মোর্শেদা বেগম বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে বলেন, ফাতেমা তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে বসে থাকেন কখন স্বামী আসবে কিন্তু তার স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা মেরে চলে গেছে কই গেছে কেই জানে না। আমি কয়েক বার বলেছি এমন আচারন কেন করছিস সন্তানদের নিয়ে সংসার কর কিন্তু কোন উত্তরই দেয়না। মেয়েটা দুই সন্তানকে নিয়ে অনেক অসহায় হয়ে পরেছে।

অন্য প্রতিবেশি মকলেছ সরদার বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে জানান, বিষয়টি নিয়ে সুরাহার জন্য আবুল কাশেমকে গ্রামের ময়মুরব্বি এবং মাতব্বরা মিলে কয়েবার বলেছি যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেছি কিন্তু সে আমাদের কথাকে পাওাই দেয়না। ঘরে তালা দিয়ে গেছে, কই থাকে কি করে আমরা কিছুই জানিনা।

ফাতেমা বেগমের মেয়ে ৮ম শ্রেনী পড়–য়া মরিয়ম আক্তার বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে বলেন, আব্বু এমন করছেন কেন? বিদেশ থেকে আসার পর আমরা বাসায় এসেছি তবুও আব্বু একটু কথা না বলে বাসায় তালা দিয়ে চলে গেছে। আমরা এখন কি করবো! আমরা আব্বুর সাথে থাকতে চাই।

ফাতেমা বেগম বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে বলেন, স্বামীর বাড়িতে আসলে আমার স্বামী তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বিদেশ থাকতে নাকি আমাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু তার কোন কাগজ আমি আজও হাতে পাইনি। তাহলে তালাক হলো কিভাবে। শ্বশুর শ্বাশুরী বেঁচে নেই। আমার স্বামীর এক ছোট ভাই আছে সেও মানুষিক ভারসম্যহীন কখন কই থাকে আমরা জানিনা। কার কাছে সাহায্য চাইবো বলেন? আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই। কেন সে এমন করছে কিছুই জানিনা। সমাধান না পেলে হাসুয়া দিয়ে সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করব।

আরও পড়ুন :

https://shadinbanglanewstv.com/2019/09/24/

মুঠোফোনে এবিষয়ে কথা হলে ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে জানান, বিদেশে থাকাকালীন সময়ে কাজীর সাথে পরামর্শ করে ২ বছর আগে তালাক দিয়েছি তবে তালাকের কাগজ হয়তো ফাতেমা গ্রহন করেনি সে জন্য অস্বীকার করছে। এখন কাবিননামার বিষয়টি নিয়ে এক সময় বসে ফয়সালা করা হবে। তিনি আরও বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে বলেন, অনেকদিন যাবৎ আমার বাসায় না থাকার কারনে ঘরটি সংস্কারের প্রয়োজন তাছাড়া আমি যেহেতু আবার বিদেশে চলে যাবো তাই আমার বাসায় না থেকে অন্যখানে আপাতত থাকছি। ফাতেমার চরিত্র ভালো নয়, আমার অনেক টাকা-পয়সা সে নষ্ট করেছে। তার সাথে আর ঘর-সংসার করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই!

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মোজাফর হোসেন বিডি নিউজ বুক টোয়েন্টিফোর ডট নেটকে জানান, ফাতেমা থানায় এসেছিল তারপর বিষয়টি নিয়ে ফাতেমার স্বামীকে ফোন দিয়েছিলাম তখন তিনি বলেন, আমার বাসায় উঠলে উঠুক আমি তো বাঁধা দেইনি। তবে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। তারপর ফাতেমাকে আদালতে গিয়ে উকিলের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেই।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.