উৎসব উদযাপনে প্রস্তুত পদ্মার পার

আর মাত্র কিছু সময় বাকি। এরপরই দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন হবে। রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মা-বিধৌত জনপদ। এখন শুধু সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা। আগামীকাল শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধন শেষে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী জনসভাস্থলে শেষ পর্যায়ে রয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ। লাখ লাখ মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠান উপভোগের ব্যবস্থা। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ছয় শতাধিক টয়লেট, থাকছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। নদীপথে আসা মানুষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ২০টি পল্টুন। থাকবে ৪০ শয্যাবিশিষ্ট তিনটি অস্থায়ী হাসপাতাল।

প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসভাস্থলের সভামঞ্চ পদ্মা সেতুর আদলে সাজানো হচ্ছে। থাকছে ছয় দিনব্যাপী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন। আর এসব ঘিরে মানুষের মনে, বিশেষ করে পদ্মাপাড়ের মানুষের ঘরে বইছে উৎসব। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা চৌকি। সব মিলিয়ে পদ্মাপাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ।

পদ্মাপাড়ের চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে আত্মীয়-স্বজনেরা বেড়াতে চলে এসেছে এরই মধ্যে। এই এলাকার গ্রামের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দ-উদ্দীপনা। শনিবারের জন্য সবাই অপেক্ষায় রয়েছে। ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ বইছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চলছে সার্বিক প্রস্তুতি। তাকে বরণ করতে দলীয় নেতাকর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করছেন। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল পরিদর্শন করছেন।

মাদারীপুরের শিবচরে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে দিন-রাত চলছে প্রস্তুতি। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি বাংলাবাজার এলাকার পদ্মা নদীর পাড়েই পদ্মা সেতুর আদলে সভামঞ্চ সাজানোর কাজ চলছে প্রায় এক মাসব্যাপী। দিনরাত শ্রমিকেরা কাজ করছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল আলম ওয়াহাবি রানা বলেন, পদ্মায় সেতু হতে পারে এমন ভাবনা কল্পনাতেও ছিল না। ঝড়-বৃষ্টি, বর্ষায় ঢাকা যাওয়া ছিল এই এলাকার মানুষের কাছে সবচেয়ে কঠিন ও কষ্টের। আমাদের এলাকায় তেমন রাস্তাঘাট ছিল না। এক পদ্মা সেতু পালটে দিয়েছে এ এলাকার চিত্র। আগে আমাদের ‘গাঁও-গেরামের’ লোক বলতো। এখন এ এলাকায় অসংখ্য লোকজন ঘুরতে আসে। জমজমাট সব জায়গা। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’

মাদারীপুর এলাকার শিব শংকর চক্রবর্তী শিবু বলেন, ‘সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে বাড়ি চলে এসেছি। সেতু চালুর পর সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় যাব।’

শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এখন যেন সময় ফুরোতেই চাচ্ছে না। আগামীকালের অপেক্ষায় আছেন তারা। জনসভার মঞ্চ প্রস্তুতসহ চারপাশ সাজানো হচ্ছে। আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। এটি অন্য রকম আনন্দ!

পদ্মাপাড়ের চরজানাজাত গ্রামের মাশুকুর রহমান মুবীন বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এক বুক আবেগ পদ্মা সেতু নিয়ে। জনসভা হবে আমাদের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে। পদ্মার পাড়েই। আমাদের এলাকায় উৎসবের আমেজ বইছে।’

মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরই মধ্যে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে কাজ করছে।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.