তাড়াশে ব্যক্তি উদ্যোগে পুকুরে লাল শাপলা চাষ

সোহেল রানা সোহাগ,

পুকুর, বিল বা জলাশয়ে, আঙ্গিনায় বা ছাদে ফোটা শাপলা ফুল দেখে আমরা বরাবরই অভ্যস্ত। আকাশের পানে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা প্রকৃতির এসব ফুল শুধু সৌর্ন্দয্যের আঁধারই নয়, জলাশয়ের সুস্বাস্থ্যেরও একটি প্রতীক। শাপলা ফুল আমাদের জাতীয় ফুল। আমাদের দেশের বাচ্চারা ছোট বেলা থেকে এই ফুলের সম্পর্কে জেনে আসে। কিন্তু তারা কখনই এই ফুল দেখে না। আগে শাপলা সাধারণত গ্রাম দেখা যেত।বর্তমানেও সেই শাপলা ফুল দেখা পাওয়া খুবই কষ্টকর। এই শাপলা বর্তমানে আপনার বাড়ীর চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ীর আঙ্গিনায় বা উঠানে চাষ করতে পারেন। তবে কোন ধরনের শাপলা চাষ করবেন সেটা সম্পন্ন আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা আছে। তবে আমাদের দেশে সাদারণত সাদা শাপলা চাষ করা হয়। এছাড়াও নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা, ইত্যাদি শাপলা আছে।

সেই দিক থেকেই বিবেচনাবশত: অথবা শখ করে বা সৌন্দর্য সভা বর্ধনের জন্য হোক বা সবজি চাষ হোক এমনটাই করেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উপজেলার তালম ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের এক ব্যক্তি মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে অবসর প্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান। তিনি নিজ উদ্যোগে পুকুরে ও পতিত জায়গায় লাল শাপলা চাষ করেছেন। শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। তাই গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল পাওয়া যায়। তাই তিনি শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করে উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে সঠিক পরিমান মাপে পানি দিয়ে চারা তৈরী করে রোপন করেছিলেন।

বর্তমানে লাল শাপলা পুকুরের সৌর্ন্দয বৃদ্ধি করেছে। এই শাপলা দেখতে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা দেখতে ভীড় জমাচ্ছে। অনুভূতি থেকে আশ্বাস পেয়েছে যে বই পুস্তকে পড়েছি আর এখন বাস্তবে দেখতে পেলাম। শুধু আনন্দ অনুভূতি কি? না শাপলার অনেক ঔষুধি গুণাগুণ আছে। শাপলা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। শাপলার ফলগুলো পাকলে কালে ও বাদামী রঙের অসংখ্য বীজ পাওয়া যায়। এই বীজ রোদে শুকিয়ে গরম বালু দিয়ে আগুনে ভেজে খই তৈরি করা যায়। ইলিশ ও চিংড়ী মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ পাওয়াা যায়।

গুনী জনেরা বলেন শাপলাতে নাকি সামান্য পরিমানে মধু থাকে যা আহরণে মৌমাছি ছুটে আসে। আর মৌমাছি যদি কোন বাগানে আসা যাওয়াা করে তাহলে না কি সে বাগানে অন্যান্য গাছে পরাগায়ন ভাল হয়। বাগান ফুলে ফলে ভরে উঠে।। সুতরাং আসুন না সবাই শাপলা লাগাই কেননা, কম বেশী সারা বছরই এতে ফুল থাকে। যা সারা দিন ব্যাপী এর সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়।

এ বিষয়ে চাষী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, আমি চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার পর আমার পরিত্যাক্ত জায়গা জমিতে বিভিন্ন  গাছের চারা রোপন করেছি। ১২৭ রকমের ফল ও ঔষধী চারা রোপন করেছি যার মধ্যে লাল শাপলাও ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এই ফুল দেখতে অনেক দুর থেকে ছেলে মেয়েরা আসে। এই শাপলা থেকে খই তৈরী করা হয়। সবজি হিসেবে খাওয়া যায় এবং পুজার কাজে ব্যবহার করে অর্থ আয় করি।মুলত: আমি শখ করে এই লাল শাপলা রোপন করেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার লুনা বলেন, চাষী মজিবর রহমান যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ। এই কাজটা যেন উনার টেকসই হয় এজন্য আমাদের কৃষি উপ-সহকারীরা নিয়মিত মনিটরিং করছেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দিচ্ছেন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.