- বান্দরবানে কয়েকশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তির মালিক হেডম্যান মংথোয়াই চিং - September 20, 2024
- বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরী করুন নিহত পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জরুরী -ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল - September 19, 2024
- বান্দরবানে চেক প্রতারণায় পলাতক হেডম্যান মং থোয়াই ম্রয় - September 19, 2024
এস.এম আব্দুর রাজ্জাক
টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের চার জনকে হত্যার ঘটনায় স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি মো. সাগর আলী। মঙ্গলবার(২১ জুলাই) বিকালে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট(মধুপুর থানা) আদালতের বিচারক শামসুল আলম তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহম্মেদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দিতে মো. সাগর আলী জানান, মাত্র ২০০ টাকা ধার না পাওয়ার অপমানের প্রতিশোধ নিতে আব্দুল গণিসহ পরিবারের চার জনকে খুন করেন গ্রেপ্তারকৃত সাগর আলী (২৭)। ঘাতক সাগর মধুপুর উপজেলার ব্রাক্ষ্মনবাড়ী গ্রামের মগরব আলীর ছেলে।
আদালতকে সাগর জানান, মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার আব্দুল গনি সুদের ব্যবসা করতেন। সাগর আলী তার বাসার পাশেই ভাড়া বাসায় থেকে মধুপুরে রিকশা চালাতেন। আব্দুল গনির সাথে তার আগে থেকেই সুদের টাকার লেনদেন ছিল। সাগর আলী বেশ কয়েকবার সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। গত (১৪ জুলাই) মঙ্গলবার তিনি আব্দুল গনির কাছে ২০০ টাকা ধার(হাওলাত) চাইতে যান।
আব্দুল গনি টাকা ধার না দিয়ে বকাঝকা করে সাগর আলীকে তাড়িয়ে দেয়। এতে সাগর আলী অপমান বোধ করেন। ২০০ টাকা ধার না পাওয়া এবং অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়ায় মো. সাগর আলী তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে আব্দুল গনিকে হত্যা এবং টাকা-পয়সা ও সম্পদ লুটের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর আলী তার সহযোগীকে নিয়ে (১৫ জুলাই) বুধবার দিনগত রাত প্রায় ১০ টার দিকে আব্দুল গনির বাসায় যান। যাওয়ার আগে তার সহযোগী বাজার থেকে চেতনানাশক ওষুধ নিয়ে যায়। সাগর আলী পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্দুল গনি তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেন। মো. সাগর আলী ও তার সহযোগী আকস্মিকভাবে চেতনানাশক ব্যবহার করে আব্দুল গনিকে অচেতন করে ফেলে।
পরে একে একে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে। এ সময় আব্দুল গনি ছাড়া পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিল। সবাই অচেতন হওয়ার পর ওই বাড়িতে থাকা কুড়াল আর তাদের সাথে আনা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সাগর আলী ও তার সহযোগী মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান।
আদালত পরিদর্শক আরো জানান, জবানবন্দি শেষে সাগরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে (২০ জুলাই) এ হত্যাকান্ডের সহযোগী ব্রাক্ষ্মনবাড়ী এলাকার জোয়াদ আলীকে(৩০) গ্রেপ্তারের পর ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
উল্লেখ্য, গত (১৭ জুলাই) শুক্রবার সকালে মধুপুর পৌরসভার উত্তরা আবাসিক এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ভ্যান-রিকশা-অটোর ব্যবসায়ী আব্দুল গনি (৫২), তার স্ত্রী তাজিরন বেগ ম(৩৮), ছেলে কলেজ ছাত্র তাজেল (৭৮) ও মেয়ে সাদিয়ার (৮) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার রাতেই আব্দুল গনির বড় মেয়ে সোনিয়া বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার (১৮ জুলাই) মরদেহ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। শনিবার বিকালে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে আব্দুল গনির পৈত্রিক বাড়ি মধুপুরের গোলাবাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।
রোববার (১৯ জুলাই) বিকেলে ওই ঘটনার জড়িত প্রধান আসামি মো. সাগর আলী (২৭)কে মধুপুরের মির্জাবাড়ি ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মনবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১২ সদস্যরা। গ্রেপ্তারের পর ঘাতক সাগর আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরে তার বোনের বাড়ি একই উপজেলার ব্রাক্ষ্মনবাড়ী (মজিদ চালা) থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ও লুট করা মালামাল উদ্ধার করে র্যাব।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.