১৪ দিনের পরিবর্তে আমেরিকায় ৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন চালু

এক সপ্তাহ আগেও দৈনিক সংক্রমণ ছিল গড়ে আড়াই লাখের মতো। সাত দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। আমেরিকায় গড় দৈনিক সংক্রমণ ৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ফলে হাসপাতাল উপচে যাচ্ছে রোগীতে, শয্যা অমিল বহু জায়গায়। এর মধ্যে সরকারের নতুন নিয়ম, পাঁচ দিন কোয়ারেন্টিন থাকলেই যথেষ্ট। বিচ্ছিন্নবাসের শেষে করোনা পরীক্ষা করারও দরকার নেই।

ইউরোপে ওমিক্রন মূল সংক্রামক স্ট্রেন হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমেরিকায় ডেল্টা ও ওমিক্রন, দুই স্ট্রেনেই সংক্রমণ বাড়ছে। যাকে বলা হচ্ছে, ‘ডেলমিক্রন’। এর অর্থ, কোনও এলাকায় একই সঙ্গে ডেল্টা ও ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি। দেশের শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি-ও চিন্তা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, দু’টি স্ট্রেনেরই ক্ষমতা বৃদ্ধি ভয়ের। কারণ ওমিক্রনে বাড়াবাড়ি না-হলেও (এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে), ডেল্টা সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছেই। টেক্সাস-সহ আমেরিকার একাধিক প্রদেশে ‘ন্যাশন্যাল গার্ড’-কে নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলায়। চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ ও অন্যান্য সমস্যায় সাহায্য করছে তারা।

সংক্রমণ মারাত্মক বেড়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরবন্দি। প্রশাসনের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতির মুখে। এ অবস্থায় সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও করোনা-মুক্ত কিনা জানতে, ঘনঘন পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে লোকজনকে। একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। বিশেষ করে বহু লোকের শরীরে ওমিক্রন সংক্রমণের পরে কোনও উপসর্গ নেই। ফলে পরীক্ষা না-করালে রোগ ধরার উপায় থাকছে না। কিন্তু উপসর্গহীন ব্যক্তি আরও বহু লোকের মধ্যে কোভিড ছড়িয়ে দিচ্ছে। ওমিক্রনকে ধরতে তাই দেশের সব বাসিন্দাকেই (উপসর্গ না থাকলেও) করোনা পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে।

লাখো মানুষের ঘরবন্দি দশায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তায় জো বাইডেনের সরকার। সম্ভবত, দেশবাসীর সুস্থতারও থেকেও বেশি চিন্তিত। তাই গত সপ্তাহে আমেরিকার স্বাস্থ্য দফতর বিচ্ছিন্নবাসে থাকার সময়সীমা কমিয়ে ৫ দিন আইসোলেশনে থাকার নির্দেশিকা জারি করেছে। আগে ১০ দিন আলাদা থাকতে হত। ‘ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ (সিডিসি)-র প্রধান রোশেল ওয়ালেনস্কি আবার জানিয়েছেন, কোয়রান্টিন থেকে বেরোনোর আগে পিসিআর টেস্ট করানোরও দরকার নেই। তাঁর যুক্তি, সংক্রমণের ১২ সপ্তাহ পরেও পজ়িটিভ আসতে পারে রিপোর্ট। তাই ৫ দিন আলাদা থাকলেই হবে।

আমেরিকার স্বাস্থ্য বিশারদরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। নির্দিষ্ট দিন বিচ্ছিন্নবাসের বদলে, বন্দিদশা থেকে বেরোনোর আগে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ কি না, তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ফাউচি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ৫ দিন পরে কোনও ভাবে যদি শরীরে ভাইরাস থেকে যায় (বিশেষ করে যদি ডেল্টা সংক্রমণ হয়ে থাকে), সে ক্ষেত্রে কোয়রান্টিনের পরে সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা সকলের বিপদ বাড়বে। তাই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ কি না, দেখে নেওয়া দরকার।

তবে এত দৈনিক সংক্রমণে ঘন ঘন করোনা পরীক্ষা করতে হলে, বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষার কিট থাকা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই এর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট, সংক্রমণ আরও বাড়বে। ফাউচি আজ একটি বৈঠকে সে কথা সাফ জানিয়েছেন। বস্তুত, এখন দিনে ৪ লক্ষ সংক্রমণ হলে, কোথায় গিয়ে সংক্রমণের রেখচিত্র শীর্ষ ছোঁবে, তা নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.