যেসব ভেষজ খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সারা বিশ্বে। গবেষকদের কাছে বড় চিন্তা, করোনার এই ভ্যারিয়্যান্ট তার নিজের রূপ বদলে ফেলেছে সম্পূর্ণভাবে। নতুন এই ভেরিয়েন্টে বিপজ্জনক মিউটেশন ঘটেছে। সুস্থ থাকতে চিকিৎসকেরা টিকাকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে জোর দিচ্ছেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক ভেষজ খাবারের উপরও।

প্রাকৃতিক ভেষজ খাবার রুখবে ভাইরাস সংক্রমণ, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি। সুস্থ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলস, ফাইবার। যেসব খাবারে এই সব গুণ আছে তাকেই বলে ইমিউন সিস্টেম বুস্টারস। করোনাভাইরাস সংক্রমণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে শরীর দুর্বল হলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নড়বড়ে হলে, তার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। প্রাকৃতিক ভেষজ খাবার খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যা অবশ্যই রাখতে হবে প্রতিদিনের ডায়েটে।

হলুদ দুধ

হলুদের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাদের ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের জন্য হলুদ-দুধ বিস্ময়করভাবে উপকারী হতে পারে। সাধারণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সেরা ঘরোয়া ওষুধ হলুদ-দুধ। প্রতিদিন সকালে বা রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস হলুদ-দুধ পান করলে সর্দি ও ফ্লু দূরে থাকে।

আমলকি

প্রকৃতির অদ্ভুত দান আমলকি। যকৃৎ, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গ ভাল রাখে ভিটামিন সি, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পেকটিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ আমলকি। আমলকি প্রদাহ নির্মূল করতে যেমন সাহায্য করে তেমনই কমায় জীবাণুঘটিত সংক্রমণের আশঙ্কা।

উষ্ণ পানিতে লেবুর রস

সকালে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে অনেক উপকার। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে দেহের ভেতরে পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। লেবুর শরবত লিভারে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের করে। ফলে লিভারের যেকোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

তুলসী

তুলসীর মধ্যে রয়েছে জীবাণুনাশক গুণাবলী। বিশেষত শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় দারুন কার্যকর তুলসী। পাশাপাশি দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও ক্লান্তি কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যেমন শরীরে জমে থাকা বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থগুলিকে দূরীভূত করে, তেমনই তুলসী বুকের জমে থাকা কফ দূর করতেও সাহায্য করে।

বেদানা-লেবু-কমলার রস

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেতে হবে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। বেদানা-লেবু-কমলার তিনটি ফলের রস একসঙ্গে নিংড়ে পানীয় বানিয়ে রোজ একগ্লাস করে খেতে পারলে আপনার শরীরে ভিটামিন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অভাব হবে না। শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখে এই ভিটামিন। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, থিয়ামিন, ফোলেট ও পটাসিয়াম থাকে। লেবু জাতীয় ফলে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

পেঁয়াজের রস

প্রতিদিন ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। পেঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-সেপ্টিক, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান। রয়েছে খাদ্য আঁশ, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি ও সি। অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লোহা, ফোটা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস কোরাসিটিন এবং সালফারও রয়েছে পেঁয়াজে। রোগের ভাইরাসের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এটি। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, এলার্জি ইত্যাদি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দ্বারা দূর করা সম্ভব। পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তাৎক্ষণিকভাবেই রোগ নিরাময় হয়।

অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধাকে অনেকে ভারতীয় জিনসেং বলে থাকে। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ব্যথা বেদনা কমাতে ও প্রদাহ নির্মূল করতে এর বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত রোগ থেকে সেড়ে ওঠার সময় শরীরকে চাঙ্গা করতে এই ভেষজ উপাদানটি দারুণ কাজ করে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

গরম পানিতে মধু, রসুন ও আদা

গরম পানির সঙ্গে মধু, রসুন ও আদার মিশ্রণ, ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য উপকারী। মধু, রসুন ও আদা এই তিন ঘরোয়া উপাদানে অনেক রোগ ভালো হয়। বিশেষ করে ঠাণ্ড-কাশি ও গলাব্যথা, এই তিন উপাদান খুব ভালো কাজ করে। এই পানীয় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণও বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তবে মাথায় রাখতে হবে করোনাভাইরাস ঠেকাতে এই সবই হল প্রতিরক্ষার প্রাথমিক কবচ। কোভিড আক্রান্ত হলে বা শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে শুধু পথ্যের ভরসায় থাকা ঠিক নয়। নিতে হবে চিকিৎসকদের পরামর্শ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.