ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে গত সোমবার রাতে যুবলীগকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার মল্লিকপুরে গত সোমবার রাতে যুবলীগকর্মী পলাশ শেখকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পলাশ উপজেলার চর মল্লিকপুর গ্রামের খোকন শেখের ছেলে। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। এদিকে এ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে পলাশ শেখ মোটরসাইকেলযোগে চর মল্লিকপুর গ্রামে ইমরানের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। ওই সময় ১০ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত ওই বাড়ি ঘিরে পলাশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পলাশ দৌড়ে রাস্তার পাশে ইমরানের মুদি দোকানের সামনে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী পলাশকে উদ্ধার করে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যার পর নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, মল্লিকপুর ইউনিয়নের তফসিল এখনো ঘোষণা করা না হলেও নির্বাচন ঘিরে সাবেক চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান সমর্থিত লোকজনের সঙ্গে চর মল্লিকপুর গ্রামের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদ শেখ সমর্থিত লোকজনের দ্বন্দ্ব চলছিল। পলাশ শেখ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফরিদ শেখের পক্ষে এলাকায় কাজ করছিলেন। এর জের ধরে পলাশ খুন হয়েছেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

পলাশ শেখের বাবা খোকন শেখ বলেন, “কয়েক দিন আগে সাইদুরের ভাই শরীফুল আমাকে ফোনে এই বলে হুমকি দিয়েছিল যে পলাশ যদি তাদের পক্ষে না যায়, তাহলে আমাকে চিরতরে বাবা ডাক শোনা বন্ধ করে দেবে।”

এদিকে পলাশ হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের আটক ও ফাঁসির দাবিতে লোহাগড়া যুবলীগের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল থানা মোড় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লোহাগড়া সার্কেল) তানজিলা সিদ্দিকা বলেন, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে, এখনো মামলা করা হয়নি।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে এ নিয়ে সাতজনের প্রাণহানি ঘটল। এর আগে নির্বাচনী সহিংসতায় মাগুরা সদরে চারজন, সিলেট ও ফরিদপুরের সালথায় একজন করে নিহত হন।

নরসিংদীর আলোকবালীতে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২ : এদিকে নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নরসিংদীর চর আলোকবালীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল দুপুরে আলোকবালী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি সওগাতুল আলম সংঘর্ষের ঘটনা স্বীকার করলেও তাত্ক্ষণিকভাবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দুজনই দলীয় মনোনয়ন চান। দিপু দলীয় মনোনয়ন পেলেও আসাদুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আসাদুল্লাহ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে দেলোয়ার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এতে সাতপাড়া গ্রামের মৃত সুরুজ খানের ছেলে শাহা আলম মিয়া (৪৫) এবং মৃত ফজল মিয়ার ছেলে মো. কাইয়ুম (৩০) গুলিবিদ্ধ হন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.