ঘাটাইলে খামারিদের প্রণোদনার অর্থ কর্মী সেলিমের পকেটে

মনির হোসেন : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে খামারীদের প্রনোদনার অর্থ এল এস পি কর্মীর পকেটে চলে গেছে। স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সেলিম উদ্দিন উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের নিরীহ খামারীদের প্রনোদনার অর্থ নানা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনই অভিযোগ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের ভুক্তভোগী খামারীরা।

টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় পশু খামারিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনার টাকা পাইয়ে দিতে কমিশন নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পের এক ইউনিয়ন কর্মীর বিরুদ্ধে। প্রণোদনার টাকা পাওয়া খামারিদের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন লাইফস্টক এন্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) প্রকল্পে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রতিটিতে একজন করে লাইফস্টক সার্ভিস প্রোপাইডার (এলএসপি) নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়নে কর্মকরত এলএসপিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

সেই মোতাবেক লাইফস্টক সার্ভিস প্রোপাইডার (এলএসপি) মো. সেলিম উদ্দিন উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েই খামারিদের প্রণোদনার তালিকা প্রস্তুত প্রণোদনার টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম, কমিশন নেয়াসহ নানা কৌশলের মাধ্যমে খামারিদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলা ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাড়িয়াচালা গ্রামের দশ জনের বেশি প্রণোদনার টাকা পাওয়া খামারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেলিম তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে কমিশন নিয়েছেন। আবার প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে প্রণোদনার প্রায় পুরো টাকাই হাতিয়ে নিয়েছেন।

যারা কমিশন দেননি তাদের কপালে প্রণোদনার টাকা জোটেনি। আষাড়িয়াচালা গ্রামের কাজী মোস্তফা, রফিকুল, জাহিদ হাসান, সদর সিকদার, আব্দুর কাদের এক হাজার টাকা কমিশন দিয়ে প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন।

প্রণোদনার টাকা অর্ধেক দিতে হবে এই শর্তে রাজি না হওয়ায় প্রণোদনা টাকা জোটেনি অনেকের।

আষাড়িয়াচালা গ্রমের আবু তালেবের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, সেলিম মিয়া আমার প্রতিবেশী। সে তার মোবাইলে সমস্যা থাকার কথা বলে আমার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয়।

এ সময় তিনি বলেন, আমার টাকা আপনার মোবাইলে আসবে। টাকা আসলে আমাকে দিয়ে দেবেন। যথারীতি রিনা খাতুনের মোবাইলে খামারি প্রণোদনার ১৬ হাজার আটশ ৭৫ টাকা আসে যা সেলিম মিয়া পুরোটা নিয়ে নেয়। একইভাবে ফাতেমা খাতুনের কাছ থেকে ১১ হাজার ৪১৮ টাকা ও কহিনুর বেগমের কাছ থেকে প্রণোদনার অর্ধেক ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ বিষয়ে ধলাপাড়া ইউনিয়নে কর্মরত লাইফস্টক সার্ভিস প্রোপাইডার (এলএসপি) মোঃ সেলিম মিয়ার সাথে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে বারবার কল করলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ধলাপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আষাড়িয়াচালা ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, সেলিম টাকা নিয়ে প্রণোদনার টাকা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে বলেছি। সে টাকা ফেরত দিবে বলে স্বীকার করেছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. বাহাউদ্দীন সরোয়ার রিজভী বলেন, খামারিদের প্রণোদনা তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব ছিল এলডিডিপি প্রকল্পের ইউনিয়ন পর্যায়ের লাইফস্টক সার্ভিস প্রোপাইডার (এলএসপি) কর্মীদের উপর। তাদের নির্দেশনা দেয়া ছিল তালিকা তৈরিতে যেন কোনো আর্থিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি না হয়। তারপরও কোনো এলএসপি আর্থিক অনিয়ম ও প্রতারণা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ দায় সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.