চলন্ত বাসে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, চালক গ্রেপ্তার

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় মূল আসামি বাসচালক শহীদ মিয়া (২৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগ (সিআইডি)। আজ শনিবার (২ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে এসে নামার সময় পুরাতন বাসস্টেশন থেকে সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

এর আগে ২৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বাসের হেলপারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ওই হেলপারের নাম রশিদ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান সময় সংবাদকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলন্ত বাসে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে লাফ দেয়া সেই তরুণীর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করে দিরাই থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম মামলা করার কথা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে মাথায় আঘাত নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া হাতেও আঘাত পেয়েছেন তিনি। এদিকে ঘটনারপর পুলিশ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি আটক করেছে। তবে এখনও চালক ও হেলপারকে ধরতে পারেনি। তারা ঘা ডাকা দিয়েছে। শনিবার রাতেই জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাতে দিরাইয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

দিরাই পৌর এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী। তিনি সিলেটের লামাকাজি এলাকার বোনের বাড়ি থেকে বাসে করে দিরাইয়ে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ওই তরুণীর বোন জামাই বলেন,শনিবার দুপুরে লামাকাজি থেকে আমি তাকে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলাচলকারী ফাহাদ অ্যান্ড মাইশা পরিবহনের বাসে তুলে দিয়েছিলাম। দিরাই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার আগে যাত্রী নেমে যাওয়ায় বাস ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় চালক ও হেলপার তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সন্ধ্যার পূর্বে দিরাই উপজেলার মদনপুর সড়কের সুজানগর এলাকায় এসে জীবন বাঁচাতে সে বাসের জানালা দিয়ে লাফ দেয়। এরপর বাসটি গতি বাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে যায়। আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় দুজন আমার শ্যালিকাকে উদ্ধার করে দিরাই হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে আমরা ওসমানীতে মেডিক্যালে নিয়ে আসি। পুলিশ বাসটি আটক করেছে। তবে এখনও চালক ও হেলপারকে ধরতে পারেনি।

তবে বাসমালিকদের সহায়তায় চালক ও হেলপারকে চিহ্নিত করে তাদের ছবি পুলিশকে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। মেয়েটির বাবা বলেন,সিলেটে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে। শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ে জামাই ওকে দিরাইয়ের একটি বাসে তুলে দেয়। সুজানগর এলাকায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় চালক ও তার সহযোগী। আমার মেয়ে বাঁচার জন্য গাড়ি থেকে লাফ দিলে হাতে ও মাথায় আঘাত পায়। এই ঘটনায় সাথে জরিতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি ।

সিলেট বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুকিত মুকুল বলেন,অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান মুকিত। তাদের ধরতে পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তরুণীর পরিবারের পাশে থাকার কথা জানান। তিনি আরও বলেন, সিলেট বিভাগে আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। এটি পুরো পরিবহন জগতের জন্য লজ্জার। এটি খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা।

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ওই তরুণী মাথায় ও হাতে আঘাত পেয়েছেন। মাথার আঘাত গুরুতর মনে হচ্ছে।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম মামলা করার কথা নিশ্চিত করেছেন। আসামিদের ধরতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.