ধনবাড়ীতে পিঠা বিক্রি করে জীবন চলে মজিবরের

এস.এম আব্দুর রাজ্জাক

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে প্রায় সারা বছরই চিতই পিঠা বিক্রি করে বয়োবৃদ্ধ মজিবর। বয়স আশি ছুঁইছুঁই। বয়সের ভারে ন্যুজো মজিবর ঝড়-বৃষ্টি অপেক্ষা করে সারা বছরই পৌর শহরের রাস্তায় রাস্তায় পিঠা বিক্রি করে। পিঠা বিক্রি করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই সংসার চলে মজিবরের। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ছেলের ঘরে দুই সন্তান তার কাছেই থাকে। মজিবর পৌর সভার বিলাশপুর গ্রামে ছোট একটা ছাপড়া ভাড়া নিয়ে স্ত্রী হামিদা বেগম (৬৫) ও দুই নাতি নিয়ে বসবাস করেন। প্রতিদিন বিকেলে ভ্যানে করে পিঠা তৈরীর সকল সরঞ্জাম নিয়ে বের হন। সাথে তার স্ত্রী হামিদা পিঠা বিক্রিকালীন সারা সময় সাহায্য সহযোগিতা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, এলাকার গৃহবধূ তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দোকানদার, পথচারী, শ্রমিকরা তার ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানে পিঠা কিনতে ভিড় জমায়।

পিঠা কিনতে আসা গৃহবধূ সুফিয়া বেগম  জানান, এখন আর বাড়ীতে পিঠা তৈরীর ভেজাল করি না। এ দোকান থেকেই চিতই পিঠা কিনে নিয়ে নিজ বাড়ীতে দুধে ভিজিয়ে স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিদের আপ্যায়ন করি।

স্থানীয় শাহীন ক্যাডেট স্কুলের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসাইন  বলেন, মজিবর দাদুর চিতই পিঠা খুব মজা। তিনি পিঠার সাথে শুটকি মাছ, ধনিয়া পাতা, আলু ভর্তা, সরিষা বাটা দিয়ে থাকেন। এগুলো দিয়ে চিতই পিঠা খেতে খুবই সুস্বাদু লাগে।

ইটভাটার শ্রমিক ইব্রাহিম মিয়া প্রতিদিনই কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য পিঠা কিনে নিয়ে যায়। এ পিঠা তার পরিবারের সদস্যদের খুব প্রিয়। দামের সস্তা প্রতি পিঠা মাত্র ৫ টাকা।

পিঠা বিক্রেতা মজিবরের স্ত্রী হামিদা বেগম  জানান, স্বামীর অসুস্থতার কারণে প্রতিদিনই আমি আমার স্বামী সাথে পিটা বিক্রি করতে আসতে পারিনা। তাকে একাই পিঠা বিক্রির ভ্যান ঠেলে নিয়ে আসতে হয়। সেদিন বেচা-বিক্রি কম হয়। আবার ঝড়-বৃষ্টির দিনে পিঠা বিক্রি খুবই কষ্টকর। পিঠা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। নাতি দুটাকে পড়াশুনার খরচ এ পিঠা বিক্রির টাকা থেকেই মিটাতে হয়। তার উপর আবার ঔষধপাতি কিনতে হয়।

পিঠা বিক্রেতা মজিবর  জানান, এ বৃদ্ধ বয়সে পিঠা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলতে চায় না। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলে। নিজের বাড়ী ঘর না থাকায় ঘর ভাড়া করে অতি কষ্টে থাকতে হয়। সামান্য ওয়ারিশে সম্পত্তি আছে। এতে যদি সরকারীভাবে কোন ঘরের সাহায্য সহযোগিতা পেতাম তাহলে ওয়ারিশের সামান্য জায়গায় স্ত্রী ও নাতিদের নিয়ে শেষ বয়সটা কাটাতে পারতাম।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.