ডাল-কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে সাতক্ষীরার নারীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
ভোর সকালে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। পৌষ-মাঘ শীতকাল। তবে এর আগে থেকে শীত শুরু হয় এবং শেষ হয় কিছুটা পরে। যদিও এখনো পুরোদমে শীত শুরু হয়নি।

শীতের মৌসুমে অন্যরকম আমেজে দেশের প্রতিটি গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার মাঝে সময় পার করে। গ্রামাঞ্চলের নারীরা বিভিন্ন মৌসুম খাদ্য তৈরিতে বেশ আনন্দদায়ক ব্যস্ত সময় পার করেন। তেমনই দৃশ্যপট দেখা গেছে সাতক্ষীরার গ্রাম বাংলার নারীদের মাঝে।

গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাজ বেড়েছে কুমড়া বড়ি দেয়ার জন্য। তবে শীতের আগমনী বার্তায় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। কুমড়া বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য উপাদান। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় আরেক নতুন মাত্রা।

জানা যায়, কলারোয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার শত শত নারী কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে মনোযোগী হয়েছে। শীত আগমনের সাথে সাথে কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে প্রায় প্রতিটি গ্রাম অঞ্চলের নারীদের মাঝে। বর্ষাকাল ব্যতীত বাকি মাস গুলোতে কম-বেশি কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়ে থাকে।

অবশ্য শীতকাল কুমড়া বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে কমবেশি কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়। অনেকেই পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রিও করে থাকেন। শীতের সময় কুমড়া বড়ির চাহিদা থাকে বেশি, সেই সুযোগে গ্রাম অঞ্চলের নিম্নবিত্ত নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপার্জন করে থাকেন। ওই কুমড়া বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাই আর চালকুমড়া, সাথে সামান্য মসলা।

চলতি মৌসুমে বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ৭০-৮০ টাকা আর চাল কুমড়া ১৫ থেকে ২০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। সাইজ হিসাবে চালকুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। ৪-৫ কেজি চালকুমড়ার সাথে ২কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল হয় বলে মনে করেন গ্রামের অধিকাংশ নারীরা।

প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিষ্কার করে কিংবা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয় বলে জানান কুমড়া বগি তৈরিতে অভিজ্ঞ নারীরা। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটা বেটি নিয়ে কুমড়া বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়।

তবে এলাকার বেশ কিছু অঞ্চলে কুমড়া বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করার জন্য। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেশিন না থাকায় নারীদের হাতে তৈরি করতে হয় কুমড়া বড়ি।

দুইটি উপকরণের সংমিশ্রণে তৈরিকৃত কুমড়া বড়ি মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে রোদে বড়ি বসিয়ে সন্ধ্যার দিকে উঠানো হয়। বিভিন্ন রংয়ের পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানোর দৃশ্য দেখতেও দারুণ লাগে। ওই কুমড়া বড়ি বসানোর পর কয়েক দিন একটানা রৌদ্রে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৫-৭ দিন পর্যন্ত লেগে যাওয়া শুকানো বড়ি কাপড় থেকে উঠিয়ে অন্য পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

কথা হয় গয়ড়ার গৃহিনী আয়শা আক্তারের সাথে । তিনি জানালেন, ৪-৫ কেজি কুমড়ার সাথে দুই কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভাল তৈরি হয়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা, আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হয়, এমনকি অনেক সময়ও লাগে। তবুও আমাদের এই শীতের সময় বেশ ভালো লাগে এই কাজ গুলো করতে।

তাছাড়া, অনেকেই বাড়তি উপার্জনের আশায় বাজারে বিক্রিতে-মৌসুমের প্রথম থেকেই কুমড়া বড়ি তৈরি করা শুরু করে দেন। স্বাদ ও মানের দিক থেকে বাজারে বিক্রি হওয়া কুমড়া বড়ির তুলনায় নিজেদের তৈরিকৃত বড়ি ভালো হয় বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কষ্ট হলেও অনেকেই তৈরি করছে যেটার সুযোগ শহরাঞ্চলের মানুষদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে মনে করেন গ্রামাঞ্চলের অনেকেই।

এক কেজি কুমড়া বড়ি তৈরি করতে প্রায় ১১০-১২০টাকার মত খরচ হয়ে থাকে। আর বাজারে ২শ থেকে আড়াই’শ টাকা দরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। এতে নিম্নবিত্ত মানুষদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হয় বলেও জানান সাতক্ষীরার কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.