মধুপুর পৌরসভা কে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখি: মেয়র মধুপুর

এস.এম  আব্দুর রাজ্জাক

মধুপুর পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ৯ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ২৫.৬২ বর্গ কিমি.। এখানে ৬২ হাজার লোকের বাস। ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৪৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৬১৯ ও নারী ভোটার ২০ হাজার ২৯। ২০১৮ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থী সরকার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে পরাজিত করে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নিয়ে গত সাড়ে তিন বছরে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ তিনি করেছেন। এনেছেন ইমাসুদ পারভেজতিবাচক অনেক পরিবর্তন। তারপরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।

উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুল গফুর মন্টুর অভিযোগ, ‘মধুপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রথম শ্রেণির না। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ী জায়গা নেই। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গোসাইবাড়ীর রাস্তা এখনও হয়নি। পোটল, জটাবাড়ী, দুর্গাপুরের একটি অংশ উন্নয়ন কাজের বাইরে রয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ বলেন, ‘পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হওয়ার ট্যাক্স বেড়েছে, কিন্তু নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজনের তুলনায় কম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে। শব্দদূষণে নাগরিকরা অতিষ্ঠ। শিশুদের জন্য বিনোদনের পার্ক নেই।’

মধুপুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ছামদানী বলেন, ‘দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা দরকার।’

এসব অভিযোগের জবাব দিতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন পৌর মেয়র মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি করেছি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করবে। দায়িত্ব গ্রহণের দেড় বছরের মাথায় এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। এই সময়ে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।

১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বব্যাংকের আওতায় ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের কাজ কিছুদূর এগিয়ে থেমে আছে। অর্থ ছাড় হলে দ্রুত এ কাজ শেষ হবে। এছাড়া জাইকার সহযোগিতায় ১৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে। জাইকা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরনো রাস্তা সংস্কার হওয়ায় পৌরসভার চেহারা পাল্টে গেছে। হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ করেছি। কয়েক হাজার স্যানিটারি ল্যাট্রিন, টিউবওয়েল বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। সড়কে বাতি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ময়লা ফেলার আধুনিক ধাতব ও সাধারণ প্লাস্টিক ডাস্টবিন স্থাপন করেছি।

বাসস্ট্যান্ডের আইল্যান্ডে ফুলের বাগান করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করেছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে পৌর এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানামুখী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট, সীমানা প্রাচীর, শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা ও লাইটের ব্যবস্থা করেছি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান, শ্মশানঘাট সহায়তার বাইরে নয়। মধুপুর বাসস্ট্যান্ডের সড়ক মোহনায় আনারসের ম্যুরাল, থানা মোড়ে অডিটরিয়াম নির্মাণ করেছি। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুটি ড্রাম্পিং ট্রাক ও একটি উন্নত রোড রোলার দিয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২০১৬ সাল থেকে মেয়র কাপ ক্রিকেটলীগ, নৈশকালীন মিনিবার ফুটবল লীগ চালু করেছি। ৩০টির মতো ক্লাব সংগঠন গঠন ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন পরিচ্ছন্নকর্মী পৌরসভা থেকে দিয়েছি। লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি। পৌরসভায় চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে সপ্তাহের নিদিষ্টি দিনে সেখানে চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।’

মাসুদ পারভেজ জানান, ‘পৌর কার্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আগের মেয়াদে দুর্নীতি হওয়া দেড় কোটি টাকা পৌর কোষাগারে ফিরিয়ে এনেছি ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিয়েছি। পৌরসভায় এখন কোনো দুর্নীতি হয় না।’

তিনি স্বীকার করেন, ‘কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় অনেক এলাকার রাস্তা সরু। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের প্রবেশের উপায় নেই। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরবাসী সচেতন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

আগামী দিনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘পৌর এলাকাকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখি। পোদ্দারবাড়ীর মোড় থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে চাড়ালজানী-দামপাড়া পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী বংশাই নদীর দুই পাশে ওয়াকওয়ে ও পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। পৌর স্টেডিয়াম, পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.