টাঙ্গাইলের মাদক সম্রাট মনির মেম্বার দুই বছর ধরে বিদেশ তবুও ইউপি সদস্য !

 টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ::

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দীঘলকান্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মনিরুজ্জামান মনির। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ২০১৭ সালের ৫ জুন উপজেলার হামিদপুর বাজার থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকা ছাড়া।
তিনি নিখোঁজ রয়েছেন নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন? তবে তাঁর পরিবারের লোকজন বলছে, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। এদিকে দীর্ঘ দুই বছর ধরে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সভায় উপস্থিত না থাকলেও তাঁর সদস্য পদ টিকে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সর্বশেষ সম্মানী ভাতা উত্তোলন করেছেন মনির মেম্বার। তাঁর এলাকায় অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি এখনো লিখিতভাবে অবগত নয় স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়।

ধনবাড়ীতে স্ত্রীর অধিকারের দাবীতে অন্তসত্ত্বা তরুণীর অনশন

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবগত করেননি। অথচ স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের আইনে পর পর তিনটি সভায় উপস্থিত না থাকলে তাঁর সদস্য পদ বাতিল হওয়ার বিধান আছে।

দীর্ঘ দুই বছর ধরে তিনি এলাকায় না থাকার কারণে সরকারি সব ধরনের বরাদ্দ ও উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে বি ত হচ্ছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন ধরনের ভাতাভোগীদের তালিকা প্রস্তুতিতেও সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা।

মনির মেম্বার ঘাটাইল উপজেলার নাটশালা গ্রামের শাহজাহান তালুকদারের ছেলে। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে উপজেলার দীঘলকান্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। এলাকায় ইয়াবা মনির হিসেবে পরিচিত।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, একসময় দিনমজুরের কাজ করা মনির মেম্বার মাদক কারবারের মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে বহুতল ভবন নির্মাণসহ প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঘাটাইল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। ১০/১২ বছর আগে দিনমজুরী থেকে ভ্যান চালিয়ে কোন রকম জীবন যাপন করতো। জামালপুর জেলার তার এক বন্ধুর মাধ্যমে সে মাদক ব্যবসা শুরু করে। লাকী সেভেন এই মনির অল্প সময়ের মধ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে রাতারাতি স্থানীয় কিছু অসাধু মাতাব্বর শ্রেণীর লোক মেনেজ করে হিরোইন, ইয়াবা, গাজা, ফেন্সিডিল এমনকি অস্ত্র ব্যবসা করে প্রায়শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

তার এলাকায় বিশাল একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে রাম রাজত্ব কায়েম করে আসছে। ভাড়ায় চালিত হোন্ডা চালক জানায়, মনির তার বর্তমানে প্রায় এক কোটি মূল্যের ৪/৫টি গাড়ী উত্তর বঙ্গে চলছে। মনির চারটি রাইচমিল ও তিনটি বাড়ীর মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দিবালোকে কথা বলতে পারে না। কারন সকল প্রশাসন নাকি কিনে ফেলেছে বলে বেড়ান। বিভিন্ন ফাক ফোকরা পারি দিয়ে ৫০/৫৫জন সহযোগী নিয়ে মাঠে মনির এখন নাটের গুরু। মাদক সম্রাট মনির মেম্বারের দ্রুত বরখাস্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

দীঘলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়নি। তিনি নিখোঁজ না আত্মগোপনে আছেন, তা সঠিক বলতে পারব না। তবে তাঁর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, তিনি নাকি বিদেশ চলে গেছেন।

ইউপি সদস্য মনির মেম্বারের বাবা শাহজাহান তালুকদার জানান, তাঁর ছেলে দুই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যান কেউ আমাকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করেনি। তবে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.