- একজন সৎ সাহসী ও মানবিক লেডি পুলিশ অফিসারের জীবন কালের গল্প - November 14, 2024
- ফরিদগঞ্জে চোরাইকৃত অটোরিক্সা ও সিএনজি স্কুটারসহ চার চোর গ্রেফতার - November 14, 2024
- আলীকদমের কৃষকরা পান চাষে স্বাবলম্বী - November 13, 2024
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যা চেষ্টার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কেবল পাঁচটি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। সর্বশেষ রায় এসেছে ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনায়।
শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল এসব অনেক ঘটনায় মামলাও হয়নি। এমনকি হামলার পর উল্টো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার নজিরও আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। স্বামী ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা। কালরাতে ঘাতকের বুলেট থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। তারপর চাইলেও দেশে ফিরতে পারেননি। যে দেশের জন্য একটি পরিবার জীবন দিল সেই পরিবারের সদস্যদেরই দেশে ফিরতে দেয়া হলো না। জার্মানি থেকে ভারত এসে আশ্রয় নেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তাঁরা।
পঁচাত্তরের ঘাতকেরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্পর্শ করতে না পারা বুলেট পিছু নেয়। দেশে ফেরার পর বাবার মতো তাঁকেও হত্যার চেষ্টা হয়েছে একের পর এক।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা জানা যায়।
এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একটি ঘটনায় পুলিশ মামলা করেছিল আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। আবার ওই সরকারের আমলেই ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আরও একটি মামলায় পুলিশ সে সময় ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও পরে বাদী নারাজি দেন এবং সেই তদন্ত এখনো চলছে।
শেখ হাসিনার ওপর হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬০ জন দলীয় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় যাদের প্রাণহানি ঘটেছে সেই পরিবারগুলো বিচার পায়নি এখনো।
১৯৮৮ সালে লালদীঘি দিয়ে শুরু
এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে আটদলীয় জোটের জনসভা ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে সশস্ত্র হামলা হয়। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পাশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছুড়লে নিহত হন ২৪ জন। (ঘটনাস্থলে ২৪ জনের নামফলক আছে)। তাদের মধ্যে ৯ জনের মতো নিহত হন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনায় কিছু লাশ চট্টগ্রামের অভয়মিত্র শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ওই সময় যার নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল সেই মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদাকে গণহত্যা মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯১ সালে পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।
১৯৮৯ সালে ধানমন্ডিতে বাসায় হামলা
১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে বলে অভিযোগ আছে। শেখ হাসিনা তখন ওই বাসাতেই থাকতেন। ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম একটি মামলা করেন।
মামলায় ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে এবং হামলাকারীরা তখন ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায় বলে এজাহারে অভিযোগ রয়েছে।
সাড়ে সাত বছর পর ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়।
আসামিদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার, ফ্রিডম সোহেল, জর্জ, মো. শাজাহান বালু, নাজমুল মাকসুদ মুরাদ কারাগারে রয়েছেন। জামিনে রয়েছেন হুমায়ুন কবির, মিজানুর রহমান, খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল ও গাজী ইমাম হোসেন। মামলার অপর আসামি সৈয়দ ফারুক রশিদ ও বজলুল হুদার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে অভিযোগ গঠনের সময় অব্যাহতি দেয়া হয়।
অপর চার আসামি সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশিদ, হুমায়ুন কবীর, জাফর আহমদ, রেজাউল ইসলাম খান পলাতক ছিলেন। ২০১৪ সালেই মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আসে। কিন্তু পলাতক থাকা আসামি নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ ইন্টারপোলের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর আবারও ওই আসামিপক্ষ আসামিদের জেরার জন্য সাক্ষীদের রি-কল করা শুরু হয়। সর্বশেষ ওই মামলায় সব সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়েছে। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবিরের আদালতে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
’৯১ সালে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে গুলি
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানমন্ডির গ্রিন রোডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তার গাড়িতে গুলি লাগলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এই ঘটনায় করা মামলার মীমাংসা হয়নি গত ২৬ বছরেও। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
’৯৪ সালে ট্রেনমার্চে পাবনায় হামলা
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে বেশ কিছু গুলি করা হয়। অসংখ্য গুলি লাগে তার বগিতে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অক্ষত থাকেন শেখ হাসিনা।এই ঘটনায় সে সময় ঈশ্বরদী থানায় মামলা হয়। এতে ১৩০ থেকে ১৩৫ জনকে আসামি করা হয়। প্রায় ২৪ বছর পর চলতি বছরের ৩ জুলাই মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু (পলাতক), কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তাঁর ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অপর ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা মো. অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল (নূরে মোস্তফা), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন ও বিএনপির সাবেক নেতা শামসুল আলমের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম (পলাতক), আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান (পলাতক) ও আক্কেল আলীসহ ২৫ জনের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। ১৩ জনকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে কারাদণ্ড।
’৯৫ সালে রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে হামলা
১৯৯৫ সালের ৭ মার্চ শেখ রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানো হয়। সশস্ত্র ওই হামলা থেকে বাঁচাতে নেতাকর্মীরা তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় করা মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু।
’৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলা
১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্মরণে বক্তৃতা করছিলেন। এসময় হঠাৎ করে একটি মাইক্রোবাস থেকে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এই মামলটিও বিচারাধীন আছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা
১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে ই-মেইল চালাচালির খবর আসে। এতে জানানো হয়, ওই ই- মেইলটি পাঠিয়েছিলেন ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী। ওই ঘটনায় মামলার বিচার কত দূর কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ করার কথা ছিল। ওই সমাবেশের প্যান্ডেল তৈরির সময়ে সন্ত্রাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার জন্য দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে। সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা ২০০০ সালের ২০ জুলাই ওই কলেজের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ও একই সালের ২৩ জুলাই হেলিপ্যাডের কাছ থেকে ৪০ কেজি ওজনের দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আসার কথা শুনে মুফতি হান্নানসহ আসামিরা সাবান কারখানায় শক্তিশালী বোমা দুটি তৈরি করেন। বোমা দুটি তৈরি করার পর ২০০০ সালের ১৯ জুলাই সাবান কারখানার গাড়িতে করে কোটালীপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। এই দুটি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে বিচারিক আদালতে।
২০০১ সালে খুলনার রূপসায় বোমা
২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ঘাতক চক্র সেখানে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে। বিস্ফোরণের আগেই বোমাটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশ।
কোটালীপাড়ায় হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হরকাতুল জেহাদ। কিন্তু তার তিন দিন আগে ২৭ মে সেতুর কাছাকাছি রূপসা নদী থেকে দুটি ইঞ্জিন নৌকা থেকে হুজি-বির ১৫ জঙ্গি ধরা পড়ে। ওই ১৫ জনের একজন মাসুম বিল্লাহ ওরফে মুফতি মইন ঢাকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন বলে তদন্তে বের হয়ে এসেছে।
একই সময় গ্রেপ্তার হওয়া অপর জঙ্গি কুতুবউদ্দিন ওরফে বাবুর বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কেষ্টপুরে। তিনি ২১ আগস্ট হামলা মামলার দুই নম্বর আসামি ও হুজির আঞ্চলিক নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়েরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
২০০১ সালে সিলেটে হামলার আগে বিস্ফোরণ
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা নির্বাচনি জনসভা করতে সিলেটে গেলে সেখানে বোমা পুঁতে রেখে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু হামলার আগেই জনসভাস্থলের অদূরে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গিদের দুই সদস্য নিহত হলে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
জনসভার আগের দিন রাত আটটার দিকে সিলেট শহরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলের কাছাকাছি ফাজিল চিশতি এলাকার একটি বাড়িতে বোমা পর্যবেক্ষণ করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে দুই বোমাবাজ নিহত হন। আহত অবস্থায় হুজির সদস্য মাসুদ আহমেদ ওরফে শাকিল (বাসা ঢাকায়) ও আবু ওবায়দা ওরফে হারুনকে (বাড়ি ফেনী) পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হুজির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন। তাতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন তিনি।
জবানবন্দিতে শাকিল বলেন, ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে শেখ হাসিনার হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যাওয়ার কথা ছিল। পরে তারা খবর পান, শেখ হাসিনা হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে যাবেন। দুই মাজারে ওত পেতে থাকার পর সন্ধ্যায় জানতে পারেন শেখ হাসিনা সরাসরি জনসভাস্থলে যাবেন। এরপর জঙ্গিরা জনসভাস্থলের অদূরে তাদের ভাড়া করা মেসে গিয়ে ওঠেন। ওই মেসেই রাত আটটার দিকে বোমা নাড়াচাড়া (পর্যবেক্ষণ) করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। যার ফলে শেখ হাসিনাকে হত্যার ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
২০০২ সালে নওগাঁর বিএমসি কলেজে হামলা
২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা হয়। এই ঘটনার জন্য তখন আওয়ামী লীগ বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলকে দায়ী করেছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এর তদন্ত আর আগায়নি।
২০০২ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পথ আটকে হামলা
২০০২ সালের ২৬ আগস্ট কলারোয়ার হিজলদীতে মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের স্ত্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেত্রী ধর্ষণের শিকার হয়ে সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩০ আগস্ট বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা খুলনা সফরের সময় এ খবর পেয়ে তাকে দেখতে সাতক্ষীরা যান।
পথে কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরের ওপর গুলি ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে হামলাকারীদের কাছে জানতে চান, ‘কী চাও তোমরা?’ তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় তাঁর গাড়ির পতাকার স্ট্যান্ড ভেঙে যায়। কয়েকজন সফরসঙ্গীও আহত হন। তাঁর সঙ্গে থাকা সাতক্ষীরার ১২ সাংবাদিক আক্রান্ত ও দুই ঘণ্টা কলারোয়া থানায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রতিবাদে ১ সেপ্টেম্বর সারাদেশে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়। সে সময় সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু ও সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবীব সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে কলারোয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৭৫ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর কলারোয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দেন।
২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি বাদী মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন জানালে তাও খারিজ হয়ে যায়। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি সে বছর ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনর্বিবেচনা মামলা করেন। ২২ এপ্রিল শুনানি শেষে সেটাও খারিজ হয়ে যায়।
একই বছরের ৪ আগস্ট বাদী এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই বিচারক নিম্ন আদালতের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলার কার্যক্রম শুরু করারও নির্দেশ দেন।
সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিমের নির্দেশ অনুযায়ী কলারোয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সফিকুল ইসলাম মামলা তিনটি তদন্ত করে প্রতিটিতে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবীব, সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার, কলারোয়া পৌর মেয়র আকতারুজ্জামান, কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রকিব, যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, যুবদল সভাপতি আশরাফ হোসেন, সম্পাদক কাদের বাচ্চুসহ ৫০ জন।
২০০৪ সালে বরিশালের গৌরনদীতে হামলা
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ওই বছরের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে ওই হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, লুটতরাজের ঘটনায় প্রকৃত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে উল্টো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের আসামি করে মামলা করে পুলিশ। পরে ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত হামলাকারীরা পার পেয়ে যায়।
রক্তাক্ত ২১ আগস্ট
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।
২০০৮ সালের ১১ জুন সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। এরপর বিচারে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ৩ জুলাই অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞের ১৪ বছর পর গত বছরের ১০ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
বিষ মিশিয়ে হত্যাচেষ্টা
২০০৭ সালে ১/১১ পরবর্তী সময় কারাবন্দি থাকা অবস্থায় খাবারে বিষ প্রয়োগ করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই খাবার খেয়ে তার চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছিল এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন।
২০০৯ সালের ২৭ জুন রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, কারাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নারী কারারক্ষীদের কাছ থেকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টার বিষয়টি তিনি অবগত হন এবং বিষয়টি শেখ হাসিনাকে জানান। এরপর শেখ হাসিনা কারাগারে চিড়া, মুড়ি ও কলা খেয়ে থাকতেন। ১১ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি প্যারোলে মুক্তি পান।
শ্রীলংকার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চুক্তি
২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী দলের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। এজন্য অগ্রিম টাকাও দেয়া হয়। শ্রীলংকার সেই সন্ত্রাসবাদী দলের আততায়ীদের টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাটি।
সক্রিয় আছে বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লে. ক. শরিফুল হক ডালিম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করে, যা উইকিলিকসের সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় প্রকাশ পায়। হংকংয়ে বসবাসরত এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইসরাক আহমেদ এ পরিকল্পনায় অর্থায়ন করেন বলে গোপন বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মানববোমায় হত্যার পরিকল্পনা
২০১৪ সালের শেষদিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। এদের নেতৃত্বে রয়েছে ১৩ জঙ্গি দম্পতি। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়।
হামলার চেষ্টায় ছিল জেএমবিও
২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ানবাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় তারা।