- গোসল করতে গিয়ে নদীতে ডুবে এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু - November 14, 2024
- একজন সৎ সাহসী ও মানবিক লেডি পুলিশ অফিসারের জীবন কালের গল্প - November 14, 2024
- ফরিদগঞ্জে চোরাইকৃত অটোরিক্সা ও সিএনজি স্কুটারসহ চার চোর গ্রেফতার - November 14, 2024
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। স্থান গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক। দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা-গ্রেনেড হামলা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সেদিন সমাবেশের আয়োজন করেছিল সেখানে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ দিকে ঘটে ভয়াল গ্রেনেড হামলা। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও সেদিন হতাহত হন মহিলা লীগের সভাপতি আইভী রহমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনাস্থলে মারা যান ২২ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইভী রহমানসহ ২৪ জন।
ওই হামলার আহত নেতাকর্মীদের অনেকে অঙ্গ হারিয়েছেন, কেউ কেউ শরীরে গ্রেনেডের শত শত স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন নিরন্তর যন্ত্রণা সয়ে। তাদের একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নাজিমউদ্দিনের সেদিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণা।
‘তখন আমি বৃহত্তর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। নেতাকর্মীদের নিয়ে আগেভাগেই সমাবেশে যাই। বসি মঞ্চের সামনে। তখন সমাবেশের শেষ পর্যায় চলছে। জননেত্রীর বক্তৃতাও প্রায় শেষ। হঠাৎ গ্রেনেড হামলা শুরু হলো। আমার মনে হচ্ছিল দক্ষিণের ভবন থেকে এসেছে। হইচই, স্লোগান শুরু হলো। এর মধ্যে চারপাশ থেকে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে, আর বিকট বিস্ফোরণ। শত শত মানুষের আর্তনাদ।
‘আমি উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। বেশ কয়েকটা লাশ আমার ওপরে পড়ল। নড়তেও পারছিলাম না। কোমর থেকে নিচের দিকে বেশ যন্ত্রণা হলো। চোখে-মুখে রক্তমিশ্রিত বালি পড়তে লাগল। টুকরো লাল মাংস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে চারপাশে।
‘আমি কয়েকটি লাশের চাপায় পড়ি। হামলা শেষ হওয়ার পর লাশের চাপা থেকে বহু কষ্টে নিজেকে বের করতে পারি, কিন্তু উঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। বেশ খানিকক্ষণ চেষ্টা করে একটু দাঁড়াতে পারলাম। দেখি একটি মাইক্রোবাস সামনে এল নিতে। কিন্তু তাতে উঠিনি। ভয় পাচ্ছিলাম কোথায় না আবার নিয়ে যায়।
‘এরপর একটি ভ্যানে আমার পরিচিত কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখতে পাই। সেই ভ্যানগাড়ি ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ার পর পিজিতে পাঠানো হয়। শেষে বারডেমে চিকিৎসার পর উত্তরায় চলে আসি। সেখানকার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হই। পরে কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা চলছেই।
‘এখনো পায়ের সমস্যাটা রয়ে গেছে। শরীরের ভেতরে স্প্লিন্টারগুলো সাইলেন্ট অবস্থায় আছে। ভীষণ যন্ত্রণার মধ্যে দিনকাল কাটাচ্ছি।
‘এই শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে আর একটা বড় দুঃখ- যারা নেত্রীকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার এই নৃশংস হামলার মূল হোতারা শাস্তির আওতায় আসেনি। ২১ আগস্ট হামলা কোনো অগোছালো আক্রমণ ছিল না। পরিকল্পিত ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আরো চরিত্র আছে। আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। সুষ্ঠু তদন্ত হোক সেগুলো নিয়ে।
‘আর বিচারের যে রায় হয়েছে তার অবশ্যই দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। আমরা আহতরা অনেক কষ্টে দিন পার করছি। এ ঘটনার বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই।’