হাজারো শ্রমিক বেকার, ক্ষতিগ্রস্থ রাষ্ট্রিয় কোষাগার যান্ত্রিক ত্র“টির অজুহাতে যমুনা সার কারখানায় ১০মাস উৎপাদন বন্ধ

0

সরিষাবাড়ি (জামালপুর) থেকেঃ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের সরিষাবাড়ি তারাবান্দি যমুনা সার কারখানায় যান্ত্রিক ত্র“টির অজুহাতে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। প্রতিদিন ১৭০০ মে.টন উৎপাদনশীল বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি ১১ নভেম্বর/১৮ইং সাল থেকে বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজারো খেটে খাওয়া শ্রমিক। দীর্ঘ ১০মাস উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্রিয় কোষাগার।

সোমবার যমুনা সার কারখানা এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২০১৮ইং সালের ১১ নভেম্বর কারখানার পাওয়ার প্লান্টে যান্ত্রিক ত্র“টি দেখা দেয়। সেদিন থেকেই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ভুমিকা ধীরগতির ফলে আজোও উৎপাদনের মূখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ কারখানা বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ট্রাক ট্যাংক লড়ীর চালকগণ অলস সময় পার করছেন। অর্থাভাবে খেটে খাওয়া শ্রমিক ও চালকদের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। অপরদিকে কারখানা বন্ধ থাকার অজুহাতে চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে নিম্নমানের সার আমদানী করে গুদামজাত করা হয়েছে। আমদানীকৃত সার নিম্নমানের হওয়ায় অনেক সারের বস্তা অতি সহজেই নষ্ট হয়ে গলে যাচ্ছে। পরিবহন চালকদের বরাতে জানা গেছে আমদানীকৃত নিম্নমানের সার পরিবহন করতে পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। যদিও ১০/১৫দিন পর একটি টিভ প্ওায়া যায়। নিম্নমানের সারের ছিঁড়া ফাটা বা জমাট বাধা বস্তা বহন করতে হিমসিম খেতে হয়।ওইসব সার গুদাম থেকে ডিলারদের নিকট পৌছাতে যেয়ে খেতে হয় নাকানী চুবানীও। অনেক ডিলার সার নিতে অস্বীকৃতি জানায়।বর্তমান সময়ে জামালপুর জেলায় সারের চাহিদা রয়েছে জুলাই মাসে ২৬৯০ মে.টন, আগষ্ট মাসে ৬৯১৮ মে.টন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫০০ মে.টন। এ ছাড়াও যমুনা সার কারখানায় উৎপাদিত সার দেশের ১৯টি জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।১৯ আগষ্ট দুপুর পর্যন্ত জেএফসিএল’র উৎপাদিত মোট ১২৭ মে.টন সার কারখানার গুদামে রয়েছে বলে জানা গেছে। আমদানীকৃত সারসহ বর্তমানে মজুদ (২০১৭-১৮,২০১৮-১৯ এবং২০১৯-২০ইং জন্য) মোট ৩৫৫০০৮.৮৫ মে.টন।.যেখানে জেএফসিএল এর গুদামের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১২হাজার ব্যাগ। কারখানার ভিতর ও বাহিরে ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে আমদানীকৃত সার স্তুপ করে পলিথিন বা ত্রিফল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। কোন কোন সারের স্তুপের পাশে ময়লা বা স্বচ্ছ পানি জমে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সার গলা স্বচ্ছ পানি থেকে যা ডেঙ্গু মশার বিস্তার ঘটাতে পারে।

কারখানায় কর্মরত শ্রমিক হাবিজুর, মনজুসহ ১০/১২জন শ্রমিক এবং ড্রাইভার অভিযোগ করে বলেন,দীর্ঘদিন যাবৎ সার কারখানা বন্ধ রয়েছে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। চায়না থেকে আমদানী করা নিম্নমানের সার বহন করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।অনেক বস্তার সার গলে পানি ঝরে পড়ছে। গলে যাওয়া সার ড্রেনের মাধ্যমে পার্শ্ববতী আবাদী জমি কিংবা মৎস্য খামারে প্রবেশ করছে। উৎপাদনশীল জমি উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে এবং মৎস্য খামারে মাছ মরে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারীবৃন্দ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ওয়ায়েছুর রহমান বলেন, যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে ১১ নভেম্বর ২০১৮ইং থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানার গুদামে মাত্র ১২ হাজার বস্তার ধারণ ক্ষমতা আছে।আমদানীকৃত সার প্রতি সারিতে নীচ থেকে উপরে ৩২টি করে বস্তা রয়েছে। নীচের বস্তাগুলো উপরের বস্তার চাপে জমাট বেধে যেতে পারে কিংবা ফেটে গলেও যেতে পারে।

এ বিষয়ে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান জাবেদ আনোয়ার এর নিকট জানতে চাইলে তিনি এক ঝাক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দের সামনে কোন প্রকার বক্তব্য বা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি পাশ কাটিয়ে বলেন আমি নতুন এসেছি মাত্র।

প্রতিদিন ১৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনকারী দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানায় ১০মাস উৎপাদন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক ও ট্রাক চালকগণ বেকার হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া শ্রমিক ও ড্রাইভারদের পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। সচেতন মহলের ধারণা, কোন অশুভ চক্রের কু চক্রে বন্ধ রয়েছে কারখানাটি। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট এলাকাবাসি,ডিলারবৃন্দ, ট্রাক ট্র্যাংক লড়ী মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নসহ সর্বস্তরের জোড়ালো দাবী অতি শ্রীঘ্রই বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয় করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজির পথ সুগম করার।

Leave A Reply